Friday 11 January 2013

নতুন আতঙ্ক মোবাইল ফোন হ্যাকিং


ইন্টারনেটে হ্যাকিং আতঙ্ক নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে চলছে তোলপাড়, তখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে সামনে এসেছে মোবাইল ফোন হ্যাকিং। মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নম্বর ব্যবহার করে গ্রাহকের অগোচরেই হ্যাকাররা কল করছে। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা এসএমএস পাঠাচ্ছে; এমনকি মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত সব ধরনের অডিও-ভিডিও ফাইল, ফোন নম্বর, ফোনে ব্যবহার করা পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর সবকিছুই হ্যাকারদের কাছে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া কল রেকর্ড, ব্লক সব কিছুই করতে পারছে হ্যাকররা। এরই মধ্যে মোবাইল ফোন হ্যাকিং মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য না এলেও অপরিচিত কোড(+৯) দিয়ে ফোনকল আসার নজির পাওয়া গেছে। প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার সমকালকে বলেন, বাংলাদেশেও মোবাইল ফোন সিম ক্লোনিংয়ের ঝুঁকি খুবই বেশি। এমন হতেই পারে, ক্লোনিং কিংবা হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি যাচাই না হওয়ায় এবং সচেতনতার অভাবে জানা যাচ্ছে না। আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে দেশের কোটি কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি ভারতের অন্যতম বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর বিএসএনএল গ্রাহকদের অভিযোগ থেকে জানতে পারে, ফোন ব্যবহারকারীরা তাদের ফোনে অ্যাকাউন্ট রিচার্জ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রহস্যজনকভাবে ব্যালান্স শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসতে শুরু করলে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে উদ্ঘাটিত হয় সিমকার্ড ক্লোনিং বা হ্যাকিংয়ের তথ্য। পরে ভারতের অন্যান্য মোবাইল ফোন অপারেটররাও ফোন হ্যাক হওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা পাঠায় গ্রাকহদের কাছে। ভারতীয় মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় দেড় লাখ সিম ক্লোন বা হ্যাক হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
ভারতের লক্ষেষ্টৗর নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ পুনিত মিসরা জানিয়েছেন, হ্যাকাররা মোবাইল ফোন সিমকার্ড ক্লোনিংয়ের জন্য ব্যবহার করছেন একটি ইউনিকোড। এই ইউনিকোডটি প্রথমে কলারের হ্যান্ডসেট কিংবা পিসি অথবা সার্ভারে মাদার ফাইল হিসেবে অ্যাকটিভ করা হয়। পরে ওই কোড নম্বর যে কোনো মোবাইল ফোন নম্বরে প্রবেশ করালেই মোবাইল ফোন নম্বরটি কপি হয়ে যাচ্ছে। ভারতের নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ রাকসিত ট্যান্ডন এ ব্যাপারে কয়েকটি উদাহরণও তুলে ধরেছেন তার নিজস্ব সমীক্ষা থেকে। দেখা গেছে, ভারতে মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে +৯২, #৯০ এবং #০৯ ইউনিকোড। অপরিচিত কোনো নম্বর থেকে ফোন দিয়ে হ্যাকার নিজের পরিচয় দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফোন অপারেটরের গ্রাহক সেবাকেন্দ্রের কর্মী হিসেবে এবং ফোন ব্যবহারকারীকে নেটওয়ার্ক নির্বিঘ্ন আছে কি-না তা যাচাই করতে বিশেষ কোডটি চাপতে অনুরোধ করছে। যিনি কলটি রিসিভ করেছেন তিনি কলারের কথামতো কোড চাপার সঙ্গে সঙ্গে তার ফোন নম্বর যেমন ক্লোনিং হবে, তেমনি তার ফোনের ডাটা কপি হতে শুরু করবে। এমনকি কলটি কেটে দিলেও কপি চলবে। ফোনের পাওয়ার সুইচ বন্ধ করা ছাড়া এই কপি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এই বিশেষজ্ঞ বিষয়টিকে তুলনা করেন ব্লুটুথ শেয়ারের সঙ্গে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্লুটুথ দিয়ে কিছু শেয়ার করতে চাইলে শেয়ারিংয়ে থাকা দুটি হ্যান্ডসেটেই একটি কোড নম্বর ব্যবহার করতে হয়। হ্যাকররা শুধু ফোন করে গ্রাহকদের কোড নম্বর চাপতে অনুরোধ করছেন তাই নয়, তারা ওই কোড নম্বর ব্যবহার করে কলও করছেন। এ ক্ষেত্রে বিপদ আরও বেশি। এ ধরনের কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে রিসিভারের হ্যান্ডসেটের সব তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। প্রায় এক বছর ধরে ভারতে এ ধরনের হ্যাকিং শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ সংক্রান্ত একাধিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী ” #, + কিংবা *” দিয়েই ইউনিকোডের শুরু হয়। এ কারণে এ ধরনের প্রতীক দিয়ে শুরু যে কোনো ধরনের কল গ্রহণ না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

No comments:

Post a Comment